নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অজ্ঞাত যুবতীর লাশ উদ্ধারের প্রায় ৬ মাস পর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অজ্ঞাত ওই যুবতীর নাম পাপিয়া বেগম। তাকে খুন করে তার আপন ভাই। আর লাশ গুম করে তার পিতা জয়নাল ও প্রেমিক আরিফুল।
রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে ফতুল্লার ভুইগড়ে পিবিআই কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৮ মে আড়াইহাজার উপজেলার শিমুলতলা থেকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করে। পরে পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি গত ২৩ জুলাই পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই তদন্ত শুরু করে আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে অবশেষে পরিচয় পায় ওই যুবতীর নাম পাপিয়া বেগম (২০)।
পুলিশ প্রথমে পাপিয়ার পিতা জয়নাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পরে তাকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে জানায়, তার পরিকল্পনামতেই পাপিয়ার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আড়াইহাজারের শিমুলতলা নামক স্থানে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়েছে। তার তথ্যমতে, বুধবার (১৮ নভেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ঘটনায় জড়িত আসামি আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
যেভাবে হত্যার পর পাপিয়ার লাশ গুম করা হয়
শনিবার (২১ নভেম্বর) আসামি আরিফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। আদালতকে সে জানায়, তার সঙ্গে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক পাপিয়ার ভাই সাম্মি (তৃতীয় লিঙ্গ মর্মে জনশ্রুতি আছে) মেনে নিতে পারেনি। সাম্মি চাইতো আরিফুল ইসলাম তার সঙ্গে প্রেমের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুক। কিন্তু এই বিষয় পাপিয়া জানতে পারে এবং দুইজনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়।
ঘটনার দিন গত ২৭ মে আরিফুল ইসলাম, পাপিয়া ও তার ভাই সাম্মি পাপিয়ার ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিল। দুইজনের ঝগড়ার কারণে আরিফুল বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বৃষ্টির কারণে যেতে না পারায় তার পরিচিত একই বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় জনৈক সামিয়ার বাড়ীতে অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে পুনরায় আরিফুল পাপিয়ার ঘরে এসে পাপিয়ার লাশ ঘরের বিছানার উপর দেখতে পায়। এসময় পাপিয়ার গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল এবং সাম্মি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আরিফুল ঘরের ভিতরে চলে আসায় সাম্মি আরিফুলকে বলে যে, পাপিয়া বেঁচে আছে।
আরো পড়ুন:ফতুল্লায় অগ্নিদগ্ধ বাবা-মেয়ের মৃত্যু, শঙ্কায় মা
পরে তারা একজন স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনে জানতে পারে পাপিয়া মারা গেছে। সাম্মির মাধ্যমে তার বাবা জয়নাল, পাপিয়ার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসে। পরে পাপিয়ার পিতা জয়নালের পরিকল্পনা মতে আরিফুল ইসলাম, জয়নালের ছেলে মামুন এবং সাম্মি মিলে পাপিয়ার লাশ ভৈরব ব্রীজ থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে তারা সবাই মিলে একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পাপিয়া লাশ এ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশের চেক পোষ্ট থাকায় তারা আড়াইহাজার থানার শিমুল তলা নামক স্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভিতরে পাপিয়ার লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
উল্লেখ্য গত ২৮ মে আড়াইহাজারের শিমুলতলা থেকে পুলিশ এক অজ্ঞাতনামা যুবতীর লাশ উদ্ধার করে। এবং পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ২৯ মে একটি মামলা দায়ের করে।