নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক ইলিয়াছ শেখকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ আসামীকে ৩দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে বন্দর থানা পুলিশ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে আবেদন করে। পরে আদালত শুনানী শেষে ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
এরআগে রোববার রাতে নিহত সাংবাদিক ইলিয়াছের স্ত্রী জুলেখা বেগম বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলো-তুষার (২৮), মিনা (৬০), মিসির আলী (৫৩), হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হজরত আলী (৫০)। এরমধ্যে পুলিশ সোর্স তুষারকে ঘটনার পরপর স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের সোপর্দ করে। এবং পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিনা ও মিসির আলীকে গ্রেপ্তার করে।
প্রসঙ্গত রোববার রাতে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের আদমপুর জিওধারা চৌরাস্তা বাজারে সাংবাদিক ইলিয়াছকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাওলাদ হোসেন বলেন, রাত ৯টায় জিওধারা চৌরাস্তা থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন ইলিয়াছ। বাজারে আগে থেকেই মাদক ব্যবসায়ি তুষার, তার ছোট ভাই তুর্যসহ তাদের বেশ কিছু সহযোগি অবস্থান করছিল। ইলিয়াছকে দেখেই তুষার অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। সেদিকে কান না দিয়ে ইলিয়াছ বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ করেই তুষার পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে ইলিয়াছকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এক পর্যায়ে তার পেট ও বুকে ছুরিকাঘাত করলে ইলিয়াছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, কিছুদিন পূর্বে তুষার মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এজন্য তুষার ও তার পরিবার ইলিয়াছকে সন্দেহ করছিল। এরা এলাকায় অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগের সঙ্গেও জড়িত। তাছাড়া ঘাতক তুষারের বাবা জামান এলাকায় ফেন্সিডিলের ব্যবসা করতো। বাবার দেখানো পথেই ওই এলাকার তুষার ও তার ভাই তুর্য মাদক ব্যবসা করে।
দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সেন্টু বলেন, ইলিয়াছ তার এলাকার মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ ভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে তাদের টার্গেটে পরিণত হন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ইতিপূর্বে বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাকে জীবন দিয়ে তার মূল্য পরিশোধ করতে হলো। পরিকল্পিভাবে ঘাতকরা ইলিয়াছকে হত্যা করেছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেন।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সাংবাদিক ইলিয়াছ হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এরমধ্যে ৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।