সন্তান হারানোর বেদনা কতটা নিমর্ম তা দেখা গেছে শুভ’র মায়ের আর্তনাদ দেখে। বন্ধু নামের ঘাতকদের নৃসংশতায় শুভ পৃথিবীর মায়া ছেড়েছে ১২দিন আগে। এটা সবার কাছে সত্য। কিন্তু মায়ের মন! মা তার সন্তানকে খুঁজে ফিরছে এখনো। তার কাছে মনে হচ্ছে তার সন্তান মরেনি। সে বেঁচে আছে। তাই তো ব্যানারে ছাপানো সন্তানের ছবির দিকে ছুটে গিয়েছেন মা রওশন আরা। শুভ, শুভ বলে বিলাপ করতে করতে অসংখ্য চুমু খেয়েছেন সন্তানের ছবিতে। তার আর্তনাদে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেয়া এলাকাবাসী ও স্বজনরা। অনেকে নিরবে চোখের জল মুছেছেন।
বুধবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আহাদ আলম শুভ (৩০) হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে মানববন্ধনের আয়োজন করে তল্লা হাজীগঞ্জবাসী। সবার সাথে নিহত শুভ’র বাবা-মা ও স্বজনরাও অংশ নেয় এই মানববন্ধনে। মানববন্ধন চলাকালে শুভ’র মায়ের এমন আর্তনাদ উপস্থিত অনেককেই কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে তোলে। অনেক কস্টে তাকে শান্ত করতে পারলেও এক সময় মুর্চ্ছা যান তিনি।
মানববন্ধনে রওশন আরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বার বার বলতে থাকেন, ‘আমি হৃদয়, সুফিয়ানরে (উভয় শুভ হত্যা মামলার আসামি) মাইরালামু।’ এই কথা বলতে বলতে হাত দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করতে থাকেন তিনি। এসময় বড় ছেলে তৈমুর আলম রোকন মাকে জাপটে ধরেন। ছেলের বুকে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে থাকেন মা রওশন আরা।
এদিকে শুভ’র বাবা বশির মিয়া মাইক হাতে স্থানীয় সাংসদ ও মেয়রসহ সকলের কাছে ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিচার চান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হৃদয় ওকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পথচারী অনেকেই এটা দেখেছে। হত্যার পরও হৃদয় হাজীগঞ্জ এসে কান্নাকাটি করে। যখন খবর হলো সেও হত্যাকারীদের সাথে ছিল তখন মাঝরাতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায়। যে নির্মমতার সঙ্গে সুফিয়ান আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তার বিচারের জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নিহত শুভর বড় ভাই তৈমুর আলম রোকন, মেঝো ভাই তৌহিদ আলম শোকন, বোন ইভা, খালা পাপিয়া ও রানুসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন রাত ১০টায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় আহাদ আলম শুভকে (৩০)। ৯ বছর সে ব্রæনাই ছিল। কয়েক মাস আগে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আর প্রবাসে যেতে পারনে নি। তাকে হত্যার নৃসংশ একটি ভিডিও ফুটেজ নারায়ণগঞ্জ টাইমস ডটকমের ফেসবুক পেইজে আপলোড করেছে।