আড়াইহাজারে ফার্মেসীর বিক্রয়কর্মী সাইফুল ইসলাম (২০) হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তারকৃত শুভ রায় (২০) আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। কেন কি কারণে এবং কিভাবে সাইফুলকে সে হত্যা করেছে তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছে আদালতের কাছে। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াছমিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নিহত সাইফুল ইসলাম ও আসামি শুভ রায়ের মধ্যে নানা বিষয়ে মনমালিন্য ছিল। ক্ষিপ্ত শুভ পরিকল্পিতভাবে একাই সাইফুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে পরে গলা কেটে হত্যা করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালদী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজহার আসামির দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে জানান, বুধবার বিকেলে সাইফুল ইসলামের জবাই করা লাশ উদ্ধারের পরই সাইফুলের সহকর্মী মনির ফার্মেসির কর্মচারী শুভ রায়কে উপজেলার উলুকান্দি পূর্বপাড়া তার মামা বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের কাছে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যমতে গোপালদী এলাকার একটি নর্দমা থেকে একটি রক্ত মাখা প্যান্ট উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, শুভ প্রায় সময়ই ফার্মেসি থেকে ঘুমের ট্যাবলেট নিয়ে সেবন করতো। এ বিষয়ে মালিককে বলে দিত সাইফুল। তাছাড়া টাঙ্গাইলের একটি মেয়ের সাথে সাইফুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই মেয়েকে কেন্দ্র করেও দুই সহকর্মীর মধ্যে ঝগড়াও হয়। এসব কারণে শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত মঙ্গলবার রাতে হত্যাকান্ড ঘটানোর আগে দুই বন্ধু এক সাথে নাস্তা করে। এরপর সাইফুল ও শুভ মসজিদ মার্কেটের ছাদে যায়। সেখানে সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সাইফুলের পেটে কয়েকটি আঘাত করে শুভ। পরে গলা ও দুই হাতের রগ কাটার পর লাশ ছাদে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় শুভ।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দুই দিন আগে শুভ একটি ছোরা কিনে রাখে হত্যাকান্ড ঘটাবে বলে।
নিহত সাইফুল ইসলাম আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী নয়াপাড়া এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ওসমান গণির ছেলে ও গোপালদী পৌরসভার উলুকান্দি পূর্বপাড়া এলাকার বাতেন মুন্সির নাতি। সাইফুল ছোটবেলা থেকে মায়ের সাথে তার নানা বাড়িতে বসবাস করত। নরসিংদী শাটিরপাড়া কলেজে অনার্সে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল সে।
ঘাতক শুভ রায় কুমিল্লার মুরাদনগর থানার লাজৈর ইলিয়টগঞ্জ এলাকার শংকর রায়ের ছেলে। সে উলুকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার শুশান্তর ভাগিনা। মামা বাড়িতেই থাকতো শুভ।
পুলিশ জানায়, বুধবার (১২ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে গোপালদী বাজারের বড় জামে মসজিদ মার্কেটের ছাদ থেকে সাইফুল ইসলামের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বোন লিজা আক্তার বাদী হয়ে সহকর্মী শুভ রায়কে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে শুভকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হয়।